ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলায় কয়েকটি ইটভাটার আগুনে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষকেরা।
বুধবার উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া, মারাপাড়া, বারবাড়ীয়া, চারিপাড়া, অর্জুন নালাই গ্রামের ফসলের মাঠে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা যায়, গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: কাদেরের মালিকানাধীন সুরমা ব্রিকস, হাতকোড়া গ্রামে এইচএম আর ব্রিকস, চারিপাড়ায় মামুন ব্রিকসসহ আশেপাশের ইটভাটার আগুনে এসব এলাকার অন্তত ৩০ একর জমির ধান পুড়ে গেছে। কোথাও কোথাও কাঁচা ধান পুড়ে চিটায় পরিণত হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া-কাওয়াখোলা-মারাপাড়া গ্রামে বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হয়ে থাকে। এসব গ্রামের আশপাশে ৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় ফসলের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ফসলি জমির মাটি কেটে এসব ভাটায় নেওয়ায় কৃষিজমির পরিমাণও দিন দিন কমে যাচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, এবার ইট পোড়ানো মৌসুম শেষে গত সপ্তাহে একদিন ভোরে (অমুক, তমুক ভাটার) চিমনির আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ভাটা কর্তৃপক্ষ। এ সময় চিমনির প্রচণ্ড গরম বাতাসে আশপাশের ওই তিনটি গ্রামের প্রায় শ’ বিঘা জমির ধানের ক্ষতি হয়।
তাঁরা কৃষিজমিতে এসব ভাটা উচ্ছেদ এবং ইটভাটার আগুনে তাঁদের ফসলের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
কাওয়াখোলা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই ভাটার আগুনে তাঁর ৯৬ শতাংশ জমির ধান বিবর্ণ হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক ছালাম বলেন, আগুনে তাঁর ১৫০ শতাংশ জমির বোরো ধানের অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আগুনে বেশ কিছু ধান পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আগুনের তাপে অনেক ধান চিটা হয়ে গেছে।
গাংগুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের কৃষক মোঃ জলিল বলেন, আমি এনজিও থেকে টাকা উঠিয়ে ৫০শতাংশ জমি চুক্তি নিয়ে ধান চাষ করেছি। সেখানকার পাশের মামুন ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া কালো ধোঁয়া ও গরম গ্যাসে আমার জমিসহ আর প্রায় ৮ একর জমির ধান ঝলসে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আরও প্রায় ১০বিঘা জায়গার ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ক্ষতিপূরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগে আবেদন করেছেন বলে জানান কৃষকরা।
কৃষক মোঃ আঃ জলিল বলেন, গত রোববার হঠাৎ করে মামুন ব্রিকস ইটভাটার আগুন নেভানো হয়। এর কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে আমার ধান ক্ষেতসহ প্রায় ৮ একর জমির ধান ঝলসে গিয়ে হলদে হয়ে যায়। এর পর আস্তে আস্তে সেটা খড়ে পরিণত হয়। ফলে ঐ জমি থেকে কোন ধান পাওয়া যাবে না। কারণ ধান গুলি চিটা হয়ে পুড়ে গেছে। এনজিও কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অন্যেও জমি চুক্তিতে ধান আবাদ করেছিলাম। কিন্তু ক্ষেত পুড়ে যাওয়ায় এখন ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করব। তা নিয়ে দুচিন্তায় পড়েছেন কৃষক আঃ জলিল।
তিনি আর বলেন আমার পরিবারের মোট ৫জন সদস্য আমরা কি খেয়ে বাঁচব।
আরেক কৃষক মোঃ সাইজুদ্দিন বলেন, আমি ৫০শতাংশ জায়গায় ধান চাষ করেছি। আমার ধান চাষ করতে সার, বিষ, পানি খরচ, কামলা খরচ নিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার ক্ষেতে ফলন ও ভাল হয়েছিল কিন্তু মামুন ব্রিকস আমার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। তাই আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে এর ক্ষতিপুরণ চায়। তিনি আর বলেন শুধু ধান নয় আপনারা দেখেন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যে পাশ দিয়ে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে ধান নষ্ট করেছে সেই দুই পাশের বড় কয়েকটি গাছ ও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এ বিষয়ে সুরমা ব্রিকসের মালিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষকেরা যে অভিযোগ করছেন, আসলে তাঁদের এতটা ক্ষতি হয়নি। তবু যা ক্ষতি হয়েছে, তা অনিচ্ছাকৃত। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করব।’
এই বিষয়ে মামুন ব্রিকস ইটভাটার মালিক মোঃ জয়নাল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইটভাটার আগুনে কৃষকের ধান ক্ষেত পুড়ে গেছে সেই জন্য কৃষি অফিসার এসে ছিল। আমি কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলেছি।
এসময় তিনি এসব বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এবিষয়ে ধামরাই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়ে ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইদুর রহমানকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার প্রতিবেদন পেলেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।