জীবিকার তাগিদে আর একটু স্বচ্ছল থাকার আশায় পরিবার ছেড়ে মা পাড়ি জমিয়েছিলেন ভীনদেশে। দেশে রেখে যাওয়া প্রিয় মুখ গুলোকে ভুলে দীর্ঘ ২৫ বছর কুয়েতে কর্মজীবন কাটছিল ঢাকার ধামরাইয়ের মমতা বেগমের। গত দুই বছর পূর্বে মেয়ে স্বর্ণলতাকেও নিয়ে যান তার কাছে। কিন্তু ভাগ্যের নিষ্ঠুরতায় কুয়েতে গত শুক্রবার মা-মেয়েকে হত্যার কথা জানতে পারেন দেশে বসবাসরত ওই পরিবারের একমাত্র সদস্য ছেলে এজাজ আহমেদ। মা-বোনকে হারিয়ে শত শত মাইল দূরে দেশের মাটি থেকে হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে ক্ষণে ক্ষণেই বিলাপ করছেন তিনি।
রবিবার (৩০ অগস্ট) ঢাকার ধামরাইয়ের পৌর এলাকার তালতলা মহল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল মান্নান শিকদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় নিস্তবদ্ধতা। মা-বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পরিবারের বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য এজাজ। কেবল প্রিয়জনের লাশের অপেক্ষায় নিস্তব্ধ সময় পার করছেন তিনি।
নিহত মমতা বেগমের একমাত্র ছেলে এজাজ জানান, পারিবারিক স্বচ্ছলতার জন্যই ২৫ বছর আগে মা পাড়ি জমিয়েছিলেন বিদেশে। পরে নিজ যোগ্যতায় কুয়েত সরকারের স্কুল বিভাগে চাকুরি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে দুই বছর আগে একমাত্র বোন স্বর্ণলতাকেও কুয়েতে নিয়ে যান তার মা। বোন স্বর্ণলতা সেখানে একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করতেন। হঠাৎ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে তার মা মমতা বেগম ও বোন স্বর্ণলতার মোবাইল ফোন বন্ধ পান তিনি। এরপর শুক্রবার রাতে খবর আসে কুয়েতে তার মা ও বোন যে বাসায় থাকতেন, সেই বাসা থেকে তাদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে কুয়েত পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, দেশে পাঠানোর জন্য তার মা ১০ লাখ টাকা কুয়েতের বাসায় রেখেছিলেন বলে তাকে জানিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার সেই টাকা পাঠানোর কথা থাকলেও আর পাঠান নাই। এছাড়া গত শুক্রবার পারিবারিক ভাবেই কুয়েত প্রবাসী যশোরের রবিউল নামে একটি ছেলের সঙ্গে সেখানেই তার বোনের বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরপর থেকেই তার মা ও বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তিনি যতটুকু জানতে পেরেছেন, ওই বাসায় দুর্বৃত্তরা লুটতরাজ চালিয়েছে। তার ধারণা, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্রের লোভেই পরিচিতজনরাই তার মা-বোনকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। তাই চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চেয়ে দ্রুত তার মা ও বোনের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন এজাজ।
ধামরাই থানার পরিদর্শক (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। আমরা বিষয়টি অবগত রয়েছি। মা-মেয়ের মরদেহ দ্রুত দেশের ধামরাইয়ের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া আমরা সার্বক্ষণিক নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছি বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার কুয়েতের আরব টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে লেখা হয়, দেশটির জেলের আল সুখা এলাকায় নিজ বাসা থেকে দুই প্রবাসী নারীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কুয়েক পুলিশ। ওই দুই নারী সম্পর্কে মা ও মেয়ে। একই সাথে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনায় পুলিশ একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করেন।