কুয়েতে মা মমতা বেগম ও মেয়ে স্বর্ণলতা হত্যা রহস্য এখনও অজানা। মা ও বোনের হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে এবার পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য এজাজ আহমেদকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হারানোর পর দশ বছর আগে ভাইকে হারান এজাজ। এরপর গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) হঠাৎ মা-বোনকেও হত্যার খবর পান তিনি। তবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট)।
এদিকে, হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে মুঠোফোনে দুর্বৃত্তদের হুমকির মুখে পড়েন তিনি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এজাজের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
এঘটনায় সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার ধামরাই থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন এজাজ।
ধামরাই পৌর সভার তালতলা এলাকার বাসিন্দা এজাজ জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন নম্বর থেকে একাধিকবার তাকে কল করে হুমকি দিচ্ছে দুবৃত্তরা।
হুমকিদাতারা বলছে- ‘আসামি একটাও ধরতে পারবি না, আর যাদের ধরবি তারা তোর কাছের লোকজন। দুই জনকে শেষ করেছি, এখন তোকেও শেষ করব। তুই আবোল তাবোল মানুষের নাম দিবি। তুই আরও বেশি বিপদে পড়বি। দুই জন তো মরেছে, আবোল তাবোল নাম দিলে তুইও মরবি।’
এজাজ বলেন, ‘কুয়েতে যারা আমার মায়ের পরিচিত ও ওখানকার বাসায় যাওয়া আসা ছিল আমি তাদেরকেই চিনি। আর তাদের ৪-৫ জনের কথাই পুলিশকে বলেছি। কারণ, তারা কেউই সন্দেহের বাইরে না। এছাড়া দীর্ঘ ২৫ বছর কুয়েতে চাকরি করার সুবাদে মায়ের সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় কিংবা ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে। যা আমি জানি না। কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা কুয়েত পুলিশই উদঘাটন করবে।’
মা-বোন হারানো নিঃসঙ্গ এজাজ উৎকণ্ঠা নিয়ে বলেন, ‘আমি এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কায় রয়েছি। কেননা কুয়েতের মতো দেশে আমার মা-বোনকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
এদিকে গত মঙ্গলবার কুয়েতে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এখনও তাদের লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়নি। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে আইনগত বিষয় সম্পন্নের পর লাশ দেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন।
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, কুয়েতে মা-মেয়ে হত্যা ঘটনায় ধামরাইয়ে ওই পরিবারের ছেলে এজাজ নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীকে সার্বিক আইনি সহায়তা করা হবে। একই সঙ্গে কুয়েতে নিহত দুজনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ বছর ধরে কুয়েত সরকারের স্কুল বিভাগে চাকরি করে আসছিলেন ধামরাই পৌরসভার তালতলা এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল মান্নান শিকদারের স্ত্রী মমতা বেগম। দুই বছর আগে একমাত্র মেয়ে স্বর্ণলতাকেও কুয়েতে নিয়ে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি দেন।
গত মঙ্গলবার কুয়েতের জেলিব আল সুখা এলাকায় নিজ বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ।