বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবস উদযাপন করেছে বাঙালি জাতি। ভোর থেকেই সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনে জড়ো হতে থাকেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু অনেকেই স্মৃতিসৌধ ও গণকবরের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা না জানিয়ে সেলিফিবাজি ও ফটোসেশনে মত্ত হন। এমনকি অনেককে জুতা পরিহিত অবস্থায় গণকবরে উঠতে এবং স্মৃতিসৌধের মিনারের চূড়ায় উঠে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিবরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিদেশি কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা জানান। এর পরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সৌধ প্রাঙ্গণ।
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকার মেয়রগণ, বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমিক সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানান।
এবার করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে শ্রদ্ধা জানানোর বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক দূরত্ব মানেননি। অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না।
অনেকে জুতা পরে গণকবর ও স্মৃতিসৌধের মিনারের চূড়ায় উঠেছেন। অনেককে ছবি ও সেলফি তুলতে এবং টিকটক ভিডিও বানাতেও দেখা যায়।
জুতা পরে স্মৃতিসৌধ মিনারের চূড়ায় ওঠা আশুলিয়া থানা যুবলীগের কর্মী মারুফ হোসেন বলেন, ‘মানুষ তো অনেক কিছুই করে। স্মৃতিসৌধের মিনারে উঠলে অসম্মান হবে, এরকম তো কিছু না। এরকম যদি হতো, তাহলে এখানে লেখা থাকত যে, এখানে এটা করা যাবে না, এখানে ওঠা নিষেধ। তাই আমরা এখানে উঠেছি।’
ঝুঁকিপূর্ণ সত্ত্বেও এত ওপরে কেন উঠেছেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি যদি না উঠতে পারি, উঠব না। আমি জানি যে, উঠতে পারব, আমার কিছু হবে না। তাই আমি উঠলাম।’
পোশাক শ্রমিক আজিজুর রহমান বলেন, ‘অনেককেই উঠতে দেখে আমিও উঠেছি। পরে বুঝতে পেরে নেমে এসেছি। আমার ভুল হয়ে গেছে।’
ঢাকার ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রাকিব হাসান বলেন, ‘সহপাঠীকে দিয়ে আমার কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছি। এখানে যে শহীদদের কবর, আমি জানতাম না। জানলে এখানে উঠতাম না। এখানে ফলকে অজ্ঞাত শহীদদের কবর লেখা থাকলেও সেটা চোখে পড়েনি। আমার মতো অনেকেই না জেনে গণকবরে উঠে পড়েছে।’
এসব বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।