সাভার মডেল থানা ইন্সপেক্টরের অফিস কক্ষে অনাড়ম্বর পরিবেশে কেক কেটে উদযাপন করা হয়েছে জন্মদিন পালন নিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় চলছে বিতর্ক। থানার ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার দুই শীর্ষ কর্মকর্তা আগত অতিথিকে জানিয়েছেন অভ্যর্থনা। বিশেষ ব্যক্তি হিসেবেই কদর পেয়েছেন রায়হান ইসলাম (ফেসবুক নাম) নামে এক যুবক। দুই কর্মকর্তার মধ্যমনি রায়হান তাদের হাতে হাত রেখে কেটেছেন নিজের জন্মদিনের কেক। পরে রায়হানের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম। আরেক ইন্সপেক্টর (অপারেশনস) আল আমিন তালুকদার রায়হানকে কেক মুখে তুলে খাইয়েছেন।
রিপন সরদার ওরফে রায়হান ইসলাম সাভারের দিলখুশাবাগ এলাকার মো. গুলজারের ছেলে। নিজের ফেসবুক ওয়ালে নিজেকে ৭ নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দাবি করেছেন।
রোববার রাতে রায়হান ইসলাম নামে একটি ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করা এমন ছবি নিয়ে স্যোসাল মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। পহেলা ফাল্গুনের দিনে ১৪ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় স্থানীয়ভাবে সুপরিচিত ওই বাটপারের ঘটা করে জন্মদিন পালন করা নিয়ে এখন তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে সাভার মডেল থানা পুলিশ। বিরুপ মন্তব্য করেছেন নেটিজেনরা। যদিও পরবর্তীতে স্ট্যাটাসটি রায়হান ইসলাম আইডি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে, কখনও ছাত্রলীগ নেতা আবার কখনও কর্মী পরিচয়দানকারী রায়হান মূলত ফুটপাতে চাঁদাবাজি মামলার আসামি। রিপন সরদার নামে এই যুবক নিজেকে কখনও পরিচয় দেন ছাত্রলীগ নেতা আবার কখনও কর্মী হিসেবে। তবে বাস্তবে উপজেলার কোন ছাত্রলীগ কমিটিতেই তার পদ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। নিজের নামে মামলা রয়েছে সে বিষয়টিও স্বীকার করেছেন গোপনে এক কথোপকথনে। তবে রিপন সরদার ওরফে রায়হান ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানা নেই বলে জানিয়েছেন জন্মদিন উদযাপনকারী থানার দুই ইন্সপেক্টর।
থানায় জন্মদিন পালনের বিষয়ে রিপন সরদার (রায়হান ইসলাম, ফেসবুক নাম) বলেন, না তো ভাই এরকম কিছুতো হয় নাই। আপনারে কে বলছে ভাই? ওগুলা ফেসবুকে ভালো করে আমার টাইমলাইনে যায়া দেখেন। ওইখানে আমার ছবি দেওয়া আছে কি না? কিংবা আমি ছাড়ছি কি না? হয়ত বা কেউ এডিট করতে পারে। আপনি একটু ভালো করে বিষয়টা যাচাই করেন ভাই। ঘটনা সত্য হচ্ছে ভাই এটাই, আমার সাথে একটা মানুষের সম্পর্ক থাকলে তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারি। এখন এটা যদি আপনারা সমালোচনার দিকে নেন তাহলে ওটা ওইভাবেই হবে।
দলীয় কোন পোস্ট আছে কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘না ভাই আমি কোন লীগ করি না। আমি একজন সাধারণ এই আমার পরিচয়। আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। এবার আমি ৭ নং ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী। কিন্তু আমাদের পৌর যুবলীগের কমিটি যেহেতু হয় নাই। এছাড়া আমার কোন পরিচয় নাই ভাই।’
গোপন এক কথোপকথনে তিনি এক সাংবাদিককে বলেন, ২০১৯ সালে চাঁদাবাজির মামলায় সাভার বাজার স্ট্যান্ড এলাকা থেকে অ্যারেস্ট হন। তিন-চার জন দারোগা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তিন দিন জেলও খেটেছেন তিনি। যদিও এটা শত্রুতামূলক বলে দাবি করেন রিপন।
সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন্স) আল আমিন তালুকদার বলেন, এটা ওই যে তদন্ত স্যারের রুমে আসছিলো। বলল যে, স্যার আমার জন্মদিন। স্যারে আমারে ডাকলো, আমি গেলাম। একটা ফুলের শুভেচ্ছা দিলো স্যাররে এই।
থানায় কর্মকর্তার রুমে কেক কাটা কতটুকু সমিচীন এমন প্রশ্নে বলেন, এটা আসলে আমি বুঝতে পারি নাই। যে কার জন্মদিন বা কি বিষয়আশয়। ওকে আমি চিনিও না। ওর সাথে ওতোটা আমার রিলেশনও নাই।
সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, একটা মানুষ যদি কেক আইনা কয়, ‘ভাই আমার জন্মদিন কেকটা একটু কাইটা দেন এই আর কি। দুই-তিনজনে সুপারিশ করলো এই জন্য করলাম। আসলে এগুলা যদি জানতাম যে ফেসবুকে দিবে পরিচিত হলেও আমি দিতাম না। আমার নিজের ছবিই কোন দিন ফেসবুকে দেই নাই। আমার পার্সোনাল বিষয় ওগুলা কেন দিব? প্ল্যান প্রোগ্রাম থাকলে হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারতাম। হুট কইরা আইসা বলতেছে, আমার জন্মদিন কেকটা কাইটা দেন। আসলে মানবতা দেখাইতে যায়া এগুলা হয় তাহলেতো এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নাই।’
ঢাকা জেলার সিনিয়ার সাংবাদিক ও সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুস সাকিব বলেন, ‘মূলত নিজের প্রভাবটা জাহির করতেই থানায় কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। থানা হচ্ছে মানুষের ভরসার জায়গা। এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়। এখানে কারো জন্মদিন পালন আর হাসি তামাশা করার জায়গা না।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ-হিল কাফি বলেন, যদি এরকম হয়ে থাকে তাহলে দুই কর্মকর্তা ঠিক কাজ করে নাই। প্রবলেম হইছে ফ্লাওয়ার কালচার এত ভয়াবহ হইছে সেটা আসলে বলার মতো। আর ছবি তোলার কালচারটাও ভয়াবহ। সাহেদের ছবি কার সাথে নাই বলেন? বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ইন্ডিয়াতে চলে গেছে। ওনাদের (দুই কর্মকর্তাকে) সতর্ক করা হয়েছে। কারো সাথে ছবি তুলতে হলে দেখে শুনে ভেবে তোলা উচিত।