ধামরাইয়ে অভাবের তাড়নায় এক নবজাতককে ৬০ হাজার আট টাকায় বিক্রি করার তিন দিন পর এক নবজাতকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে ধামরাই থানা পুলিশ।
এসময় নবজাতককে বিক্রি ও কেনার অভিযোগে রাবেয়া মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক নার্সসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
সোমবার (২৯ জুন) ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) দীপক সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (২৮ জুন) রাতে সাভারের রাজফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়। রোববার রাত ২টার দিকে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ।
গত ২৫ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে ধামরাই সুতিপাড়া ইউনিয়নের বাটারখোলা এলাকার গুচ্ছ গ্রামের মৃত বাবুল হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম ধামরাইয়ের ডাউটিয়া এলাকার রাবেয়া মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একটি নবজাতক (ছেলে সন্তান) জন্ম দেন।
এর পরে তিনি অভাবের তাড়নায় রাবেয়া মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নার্স সাদিয়া খাতুনের পরামর্শে সাভারের এক দম্পতির কাছে ৬০ হাজার টাকায় নবজাতককে বিক্রি করে দেন।
নবজাতক বিক্রির এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তা পুলিশের নজরে আসে। পরে পরামর্শকারী ও নবজাতক বিক্রির কাজে সহায়তা করা হাসপাতালের নার্স সাদিয়াকে গতকাল রোববার (২৮ জুন) আটক করে পুলিশ। নার্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতেই অভিযান চালিয়ে রাজফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে সোমবার (২৯ জুন) নবজাতকটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এসময় ওই নবজাতককে কেনার অভিযোগে হেলাল উদ্দিন ও সাথী আক্তার নামে এক দম্পতিকে আটক করে করা হয়। এর পর রাত ২টার দিকে নাজমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে নবজাতককে মা নাজমার কোলে ফিরিয়ে দিয়ে আসেন পুলিশ।
শিশু সন্তান জন্মের ও বিক্রির চার দিন আগে মারা যান নাজমার বৃদ্ধ মা। এর দুই মাস আগে নাজমার স্বামী বাবুল হোসেন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তারও সাত মাস আগে মারা যান নাজমার বাবা আক্কাস আলী।
নাজমার স্বামী রিক্সা-সাইকেলের মেকার এবং বাবা ছিলেন দিনমজুর। স্বামী ও বৃদ্ধ বাবার আয়ের টাকাতেই চলত ছয় সদস্যের সংসার।
ভিটে মাটি ছাড়া নাজমা তার বাবা-মা, স্বামী, ছয় বছরের ছেলে নাজমুল ও আট বছরের মেয়ে রুকছানাকে নিয়ে থাকতেন ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া ইউনিয়নের ভাটারখোলা গুচ্ছগ্রামে। সেখানে তারা জাহাঙ্গীর আলমের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ঘরে ভাড়া থাকেন।
নাজমা বলেন, ‘রাতে এসে পুলিশ আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে। তিন হাজার টাকা দিয়ে বলেছে, সরকারিভাবে আমাকে তারা আরও সাহায্য করবে।’
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নবজাতককে উদ্ধার করে তার মা নাজমার কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নাজমাকে কিছু নগদ অর্থও দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারিভাবে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।’