শিরোনাম ডেস্ক: বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বর্গভ‚মি মৌলভীবাজার জেলা। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজে ভরা মায়াবী স্বপ্নপুরীর সৌন্দর্যে মোড়ানো এই জেলাটি সবুজ চা বাগানে ঘেরা। এখানকার সবুজে আবৃত উঁচু-নিচু টিলার সৌন্দর্য মন কাড়ে সব পর্যটকের। মৌলভীবাজারের অপরূপ এক স্থান বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক। মিশ্র চিরহরিৎ প্রাকৃতিক বনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই ইকোপার্কটি অসাধারণ সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি। মৌলভীবাজার শহরের পাশেই যে প্রকৃতি অপার সৌন্দর্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা কিন্তু অনেক পর্যটকেরই অজানা। কম পরিচিত এ জায়গা নিয়েই আজকের লেখা।
হেঁটে চলেছি… সজাগ মন, দু’চোখও। চকচকে নীলাকাশ। মাঝে মধ্যে মেঘ-বৃক্ষে হারিয়ে যাচ্ছে। ক্যামেরার ‘শাটার বাটন’ এর ওপর আঙ্গুল। পথের শুরুতেই গুইসাপের খসখস শব্দ। একটু পেরিয়েই ফিরোজা নীলে বাহারি এক ময়ূর। ঘাড় ঘোরালো… কী দৃপ্ত ভঙ্গিমা! পাশেই নানারঙের বাহারি ফুল। ওড়াউড়ি বিভিন্ন পাখির। হঠাৎ ধূসর এক প্রজাপতির লাফালাফি। দূরে রংবেরঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি। ছড়িয়ে থাকা নুড়ি-পাথরের পথ বেয়ে চলেছে নাম না জানা গাছগাছালি, পাখপাখালি। নরম পাতার দল পায়ের নিচে, সবুজ পাতায় মাকড়সার জাল। জমে থাকা জলে, মাটিতে, আকাশ আর জঙ্গলের সবুজকে নিয়ে ছবি হয়ে যাওয়া উভচর…আড়াল থেকে এক ঝলক উঁকি দেয়া শিয়াল- কী মনোরম দৃশ্য! মাথার ভেতর ৭০-এর দশকের কেনি রজার্স গুনগুন করছে-
ও ংবব ঃৎববং ড়ভ মৎববহ…/ও ংবব ংশরবং ড়ভ নষঁব, ধহফ পষড়ঁফং ড়ভ/যিরঃব/ঞযব নৎরমযঃ নষবংংবফ ফধু, ফধৎশ ংধপৎবফ/হরমযঃ/অহফ ও ঃযরহশ ঃড় সুংবষভ, যিধঃ ধ/ড়িহফবৎভঁষ ড়িৎষফ…
সবুজে আচ্ছাদিত ইকোপার্কটি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে সর্বদা। প্রতিদিন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। পার্কের ভেতরের আবহাওয়া সব সময় দারুণ শীতল ও শান্ত থাকে। নানান গাছপালা আর বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ বর্ষিজোড়া জঙ্গল। আটশো একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে বর্ষিজোড়া পাহাড়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বনের প্রধান উদ্ভিদ শাল আর গর্জন। এখানে দেখতে পাবেন বানর, শূকর, বেজি, হনুমান, কাঠবিড়ালি, মায়া হরিণ, সজারু, বনরুই, মেছোবাঘ, গুইসাপসহ বিভিন্ন ধরনের সাপ ইত্যাদি। মাঝে মধ্যে বনের আশপাশে কিছু মায়া হরিণ দেখা যায়। সারি সারি শাল, গর্জন, অর্জুন, সেগুন, বনাক, পিঠালি, লোহাকাঠ, লালী, জাম এবং ঔষধি গাছ বহেরা, হরীতকী উল্লেখযোগ্য। এখানে বসবাস করা জীবজন্তুর মধ্যে রয়েছে বানর, শূকর, বেজি, কাঠবিড়ালি, মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল। পাখিদের মধ্যে রয়েছে শকুন, ঈগল, ফিঙ্গে, ঘুঘু, টিয়া, শালিক, দোয়েল, বাবুই, বক, মাছরাঙা, পেঁচা, বনমোরগ, ময়না, ভিমরাজ, ইন্ডিয়ান নাইট হিরণ, প্যাঁচা, ল²ীপ্যাঁচা, মেছোপ্যাঁচা, তক্ষক, ঈগল, চিল, বাজপাখি ইত্যাদি। এ ছাড়া সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর মধ্যে রয়েছে গোখরা, দাড়াস, ডোরা, লাউডগা, দ্বিমাতা ও ঘরগিনিন সাপ।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়কপথে মৌলভীবাজার সদরে যাওয়া যায়। ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাস যায় মৌলভীবাজার। ভাড়া নন এসি বাসে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। মৌলভীবাজার শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে বর্ষিজোড়া বনাঞ্চল। শহর থেকে অটোরিকশা কিংবা রিকশায় যাওয়া যায়। এছাড়া ট্রেনে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এরপর বাস বা সিএনজি করে জেলা শহর মৌলভীবাজার যাওয়া যাবে খুব সহজেই।
কোথায় থাকবেন
মৌলভীবাজার জেলা শহরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। ভালোমানের হোটেলও আছে। ১২-১৩ কিমি দূরের শ্রীমঙ্গলেও থাকতে পারেন। আপনার বাজেটের মধ্যে এ দু’স্থানের যে কোনো হোটেল/রিসোর্টে রাত্রীযাপন করা যাবে। খাবার বিষয়েও ভিন্ন মান/দামের হোটেল পাবেন।
শিরোনাম বিডি/এআইএস